মহামারী করোনাভাইরাসে দেশে প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার) আরও ১৫ জন মারা গেছেন। ফলে দেশে ভাইরাসটিতে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫।
একই সময়ে নতুন করে ২৬৬ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৩৮।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বয়স্কদের মধ্যে বেশি হলেও বাংলাদেশে যুবক ও তরুণরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। শুক্রবারের এ ব্রিফিংয়ে বলা হয়, মোট করোনা রোগীর ৪০ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৪০ বছর। এদের মধ্যে ২১ শতাংশের বয়সই ৩০ বছরের মধ্যে।
এছাড়া শনাক্তদের মধ্যে ঢাকার অধিবাসী সবচেয়ে বেশি, ৪৬ শতাংশ। এর পরই নারায়ণগঞ্জ, সেখানে ২০ শতাংশ। এখন করোনার নতুন ভরকেন্দ্র হচ্ছে গাজীপুর। ঢাকার মধ্যে মিরপুরে রোগী সবচেয়ে বেশি, যা ১১ শতাংশ।
শনাক্তদের ৬৮ শতাংশই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকি ৩২ শতাংশ গেছেন হাসপাতালে। শনাক্তদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৩২ শতাংশ নারী।
শুক্রবার পর্যন্ত দেশের ৫০ জেলায় করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া ঢাকার ১১৩টি এলাকায় এর সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এরইমধ্যে ২৯ জেলা ও ১০ উপজেলা লকডাউন করা হয়েছে।
মহাখালীর ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের মিলনায়তনে এ অনলাইন ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
এতে নিজ বাসা থেকে সংযুক্ত হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এছাড়া এমআইএস বিভাগের পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান এতে যুক্ত ছিলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, করোনা শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ১৯০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে আরও ২৬৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে আরও ৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ৫৮ জন।
তিনি বলেন, করোনা আক্রান্তদের ৮০ শতাংশের বেশি রোগীর কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। অন্যদের অক্সিজেন সাপোর্ট ও কিছু ওষুধ লাগতে পারে। দেশের প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে।
পাশাপাশি তিনি বলেন, সারা দেশে এক সপ্তাহের মধ্যে আইসিইউ সাপোর্ট নিয়েছেন ২৭ জন। অর্থাৎ, প্রায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ রোগী আইসিইউ সাপোর্ট নিয়েছেন। এই হারে ১০ হাজার রোগী যদি আইসিইউ সাপোর্ট নেন, তাহলে ১৮০টি ভেন্টিলেটর সাপোর্ট লাগবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা যদি আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ঘরে থাকি তাহলে আমাদের জয় হবে ইনশাআল্লাহ। লকডাউন ঠিকভাবে মেনে চললে করোনাভাইরাস ছড়াবে না। আমরা সবাই মিলে এ যুদ্ধে জয়ী হব। ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন। আক্রান্ত হবেন না। করোনা পরীক্ষা করান। নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচান।
আইইডিসিআর পরিচালক ডা. ফ্লোরা জানান, আক্রান্ত ১৮৩৮ জনের মধ্যে বর্তমানে ভর্তি আছেন প্রায় ৫০০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ বাড়িতে ও ৩২ শতাংশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে হাসপাতালে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের সবার ভর্তির প্রয়োজন ছিল না। সামাজিক চাপের কারণে তাদের বাড়িতে না রেখে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইনেও বলা আছে, কেউ চাইলে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে পারেন, এতে হাসপাতালের ওপর চাপ কম পড়বে।
ডা. ফ্লোরা আরও বলেন, আক্রান্ত শনাক্তদের মধ্যে বয়স বিভাজনের ক্ষেত্রে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ২১ শতাংশ। ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৯ শতাংশ। আর ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৫ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৬৮ ভাগ পুরুষ, বাকি ৩২ ভাগ নারী। অপরদিকে শতকরা ৪৬ ভাগ ঢাকার বাসিন্দা। এরপর নারায়ণগঞ্জে ২০ ভাগ। গাজীপুরেও অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। তারপর চট্টগ্রাম ও মুন্সীগঞ্জেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি বলেন, ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত মিরপুরে। আমরা টোলারবাগে বেশি আক্রান্ত দেখেছিলাম। এখন মিরপুরের বিভিন্ন অঞ্চল এবং টোলারবাগের পুরোটা এলাকা ধরে যদি আমরা বলি, এটা শতকরা প্রায় ১১ ভাগ। এরপর রয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকা। সেখানে শতকরা ৪ ভাগ। ওয়ারী এবং যাত্রাবাড়ীতে শতকরা ৪ ভাগ, উত্তরা ও ধানমণ্ডিতে শতকরা ৩ ভাগ করে সংক্রমিত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। গত ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস ছড়ায়। বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে; যার মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মানুষকে ঘরে রাখতে রাজপথের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব ও পুলিশ।
৫০ জেলায় ছড়িয়েছে : শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫০টিতেই সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে ঢাকা মহানগরীতে।
ঢাকা বিভাগ : ঢাকা সিটিতে ৭৪০, ঢাকা জেলায় ২৮, গাজীপুর ১১৭, কিশোরগঞ্জ ৩৩, মাদারীপুর ২৩, মানিকগঞ্জ ৫, নারায়ণগঞ্জ ২৮৯, মুন্সীগঞ্জ ২৭, নরসিংদী ৬৫, রাজবাড়ী ৭, ফরিদপুর ২, টাঙ্গাইল ৯, শরীয়তপুর ৬, গোপালগঞ্জ ১৭।
চট্টগ্রাম বিভাগ : চট্টগ্রাম ৩৭, কক্সবাজার ১, কুমিল্লা ১৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৯, লক্ষ্মীপুর ১৮, বান্দরবান ১, নোয়াখালী ২, ফেনী ১, চাঁদপুর ৮।
সিলেট বিভাগ : মৌলভীবাজার ২, সুনামগঞ্জ ১, হবিগঞ্জ ১, সিলেট ৩।
রংপুর বিভাগ : রংপুর ৩, গাইবান্ধা ১২, নীলফামারী ৬, লালমনিরহাট ২, কুড়িগ্রাম ২, দিনাজপুর ৮, ঠাকুরগাঁও ৩।
খুলনা বিভাগ : খুলনা ১, নড়াইল ২, চুয়াডাঙ্গা ১।
ময়মনসিংহ বিভাগ : ময়মনসিংহ ১৮, জামালপুর ১২, নেত্রকোনা ৭, শ্রীপুর ৫।
বরিশাল বিভাগ : বরগুনা ৫, বরিশাল ১৭, পটুয়াখালী ২, পিরোজপুর ৪, ঝালকাঠি ৩।
রাজশাহী বিভাগ : জয়পুরহাট ২, পাবনা ১, বগুড়া ১ ও রাজশাহীতে ৪।
ঢাকা মহানগরীর ১১৩টি এলাকায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে- আদাবর ৫, আগারগাঁও ২, আরমানিটোলা ১, আশকোনা ১, আজিমপুর ১১, বাবুবাজার ১১, বাড্ডা ৮, বেইলি রোড ৩, বনানী ৮, বংশাল ১৫, বানিয়ানগর ১, বাসাবো ১৭, বসুন্ধরা ৫, বেগুনবাড়ী ১, বেগমবাজার ১, বেড়িবাঁধ ১, বকশীবাজার ১, বছিলা ১, বুয়েট এরিয়া ১, ক্যান্টনমেন্ট ১, সেন্ট্রাল রোড ১, চানখাঁরপুল ৬, চকবাজার ১০, ঢাকেশ্বরী ১, ডেমরা ২, ধানমণ্ডি ১৮, ধোলাইখাল ১, দয়াগঞ্জ ১, ইস্কাটন ৬, ফরিদাবাদ ১, ফার্মগেট ১, গেণ্ডারিয়া ১৪, গোড়ান ১, গোপীবাগ ৩, গ্রিন রোড ১০, গুলিস্তান ৩, গুলশান ১৩, হাতিরঝিল ১, হাতিরপুল ৩, হাজারীবাগ ১৫, ইসলামপুর ২, জেলগেট ২, যাত্রাবাড়ী ২৩, জিগাতলা ৫, জুরাইন ৩, কল্যাণপুর ১, কামরাঙ্গীরচর ৪, কাজীপাড়া ৩, কারওয়ানবাজার ১, কচুক্ষেত ১, খিলগাঁও ১, খিলক্ষেত ১, কলতাবাজার ১, কদমতলী ২, কোতোয়ালি ৪, কুড়িল ১, লালবাগ ২১, লক্ষ্মীবাজার ৪, মালিটোলা ১, মালিবাগ ৪, মানিকদী ১, মাতুয়াইল ১, মীরহাজীরবাগ ২, মিরপুর ১-এ ৮, মিরপুর ৬-এ ৩, মিরপুর ১০-এ ৭, মিরপুর ১১-এ ১৩, মিরপুর ১২-এ ১১, মিরপুর ১৩-এ ২, মিরপুর ১৪-এ ৬, মিটফোর্ড ১৭, মগবাজার ১১, মহাখালী ১২, মোহনপুর ১, মোহাম্মদপুর ২৬, মতিঝিল ১, মুগদা ৩, নবাবপুর ১, নবাবগঞ্জ ২, নারিন্দা ৩, নাখালপাড়া ৫, নিকুঞ্জ ১, পীরেরবাগ ২, পুরানা পল্টন ২, রাজারবাগ ১৩, রামপুরা ৪, রমনা ৫, রায়েরবাগ ১, রায়েরবাজার ১, সবুজবাগ ২, সদরঘাট ১, সায়েদাবাদ ১, সায়েন্স ল্যাব ১, শাহআলীবাগ ২, শাহবাগ ৬, শাঁখারীবাজার ৭, শান্তিবাগ ১, শ্যামপুর ১, শান্তিনগর ৭, শ্যামলী ৪, শেওড়াপাড়া ১, শেখেরটেক ১, সোয়ারীঘাট ৩, সিদ্ধেশ্বরী ৩, শনির আখড়া ১, সূত্রাপুর ৯, তেজগাঁও ১৬, তেজতুরী বাজার ১, টোলারবাগ ১৯, উর্দু রোড ১, উত্তরা ২০, ভাটারা ১ এবং ওয়ারীতে ২৭ জন।