আন্দোলনে অংশ গ্রহণের জের ধরে হামলা, কাউন্সিলর, আ.লীগ নেতা-কর্মীসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার কারণে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার বালুরটাল এলাকায় মিজান (৫০) নামের এক ব্যক্তির উপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে মামলাটি করেন ভিকটিম মিজানের শ্যালিকা শারমিন আক্তার (২৬)।
মামলার ৫০ আসামি হলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক নারী কাউন্সিলর (১৭, ১৮, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড) শাহিন আক্তার রোজী, আওয়ামী লীগ নেতা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার পরিকল্পনাকারী আব্দুল মান্নান প্রঃ হাতি মান্নান (৫৫), কৃষকলীগ নেতা ও একাধিক মামলার আসামি মোঃ সোহাগ মিয়া (৪২), যুবলীগ ক্যাডার একাধিক মামলার আসামি দখলবাজ কিশোর গ্যং যোগানদাতা আমজাদ হোসাইন (৪০), মাদক ব্যবসায়ী মুহাম্মদ বাবু (৩৭), জাতীয় ছাত্র সমাজ চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী শরিফুল মোল্লা নিরব (২৬), বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার পরিকল্পনাকারী মোঃ রাশেদ (৩১), এম সেলিম খান (৫৫), এম আলম খান (৫০), কৃষকলীগ নেতা মোহাম্মদ বেলাল প্রকাশ কন্ট্রাক্টার বেলাল (৪০), সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরীর বিশেষ সহকারী ও অর্থ যোগানদাতা মোঃ এজাছ প্রঃ বুমবাইওয়ালা (৬০), সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেল এর সহকারী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার পরিকল্পনাকারী হাজী ইয়াছিন (৪৫), যুবলীগ ক্যাডার জসিম তালুকদার (৪২), আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের সহকারী ও হামলার পরিকল্পনাকারী মোঃ আজিম (৩২), কিশোর গ্যাং লিডার মোঃ জাহিদুল (৩৫), এম হাবিবুর রহমান খান (৪৮), কৃষক লীগ ক্যাডার মুরাদ (৩৪), কৃষক লীগ ক্যাডার মোঃ বাচ্ছা মিয়া (৪০), যুবলীগ ক্যাডার মোঃ জসিম (৪৯), মোঃ বাচা প্রকাশ লেদায়া (৪০), সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবমাননাকারী ও হামলাকারী মোঃ মনির (৫২), চিহ্নিত সন্ত্রাসী মোঃ সাদ্দাম (৩১), ইয়াবা ব্যবসায়ী মোঃ এনাম প্রঃ ইয়াবা এনাম (২৮), মোঃ মোজাম্মেল (৩৮), মোঃ ইসলাম হোসেন প্রঃ খোকন (২৭), মাজহারুল হক চৌধুরী মিরু (৪২), মোঃ সোহেল (২৮), নেজাম উদ্দিন জুয়েল (৩৯), কিশোর গ্যাং লিডার মোঃ বাছা মিয়া (৪৩), কৃষক লীগ নেতা ইব্রাহিম (৩০), কিশোর গ্যাং লিডার মোহাম্মদ মুসা আলম (৪৩), ইনকিয়াদ মোহাম্মদ (৩০), আকতারু জামান (৩৬), চন্দন ধর, পিয়াস, মামুন (২৫), মোঃ জুয়েল (২৮), আলাল (২৮), আল আমিন প্রঃ হামকা আলামিন (৩৫), মোঃ শাহ্ জাহান প্রঃ আকাশ (৪৫), রফিক (৩৮), মোঃ অলি তালুকদার (৩৯), মোঃ মিজান তালুকদার (৫০), মোঃ জহিরুল তালুকদার (৩৮), আব্দুল জলিল (৬০), জহির উদ্দীন মোবারক, মোঃ সামছু (৪০), আবু তাহের (৩৫), মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন ও সাহিদুল ইসলাম বাবু (৩৫)।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ভিকটিম মিজান (৫০) গত ২৬ জুলাই বিকালে চান্দগাঁও থানাধীন কালামিয়া স্কুলের সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ওই সময় আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালালে ভিকটিম মিজান সহ আন্দোলনকারীদের সাথে আসামীদের একাংশের সাথে মৌখিক তর্ক-বিতর্কসহ হাতাহাতি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পুরানো ঘটনার জের ধরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভিকটিম মোঃ মিজান (৫০) কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে কাজের সন্ধানে হয়ে চান্দগাঁও থানাধীন বালুরটাল এলাকায় পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আসামিরা তাদের হাতে থাকা লোহার রড, হাতুড়ি, লাঠি সহ দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে বেআইনী জনতাবদ্ধে ভিকটিম মোঃ মিজানের উপর অর্তকিতভাবে হামলা করে। আসামীগণ ভিকটিম মিজানকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ী লোহার রড, হাতুড়ি ও লাঠি সোঠা দিয়া এলোপাতাড়ী মারধর করিয়া গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। আসামীদের লোহার রড ও হাতুড়ির আঘাতে ভিকটিম মিজানের মাথা ও কানের হাড় ভেঙ্গে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় ও তাহার ডান পায়ের হাঁটুর নিচে ও গোড়ালির উপরে হাড়ের তিনটি অংশ ভেঙ্গে পঙ্গুত্ববরণ করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভিকটিম তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে লুটাইয়া পড়ে ও জ্ঞান হারায়। পরে পথচারী লোকজন আহত ভিকটিম মিজানকে ঘটনাস্থল হইতে উদ্ধার পূর্বক চিকিৎসার জন্য দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করেন। ঘটনা ঘটার অনেকক্ষণ পর প্রকৃত ঘটনা না জেনে ভিকটিমকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় পথচারী লোকজন সড়ক দূর্ঘটনার কথা উল্লেখ করলেও মামলার সাক্ষী ও সিএনজি চালকদের কাছে হামলার প্রকৃত ঘটনা জানতে পারেন মামলার বাদী শারমিন আক্তার। ভিকটিমের দেহ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে ৩ দিন মিজানের জ্ঞান ফিরেনি এবং পরবর্তীতে অস্ত্রপাচার ও দেহে রক্ত সঞ্চালন করা হলে তিন দিন পর তাহার জ্ঞান ফিরে, বর্তমানে মিজান তার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ভিকটিম মিজান এখন তার পরিবারের কাউকেই চিনতে পারছে না। ভিকটিমের মধ্যে পাগলের আলামত দেখা দেয়ায় ও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না ঘটায় এখনো তিনি চমেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন।