সঠিক সময়ে আলু চাষে সার এবং সেচ ব্যবস্থাপনায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা।
সমিরণ বিশ্বাস
কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ:
সঠিক সময়ে আলু চাষে সার এবং সেচ ব্যবস্থাপনায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা বলে প্রান্তিক আলু চাষিদের পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট কৃষিবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সমিরণ বিশ্বাস। ২৬ অক্টোবর বিকাল তিন টার সময়ে অনলাইন ভার্চুয়ালে এ পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, আলু চাষের উপযুক্ত সময় কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস অর্থাৎ হেমন্তকাল।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম বেশি আলু চাষ করা হচ্ছে, এর মধ্যে দক্ষিণাঞ্চল, পটুয়াখালী, গলাচিপা, মির্জাগঞ্জ, দশমিনা ও রাঙ্গাবালী উপকূলীয় এলাকায়’ও নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী আলু চাষে প্রান্তিক চাষি ভাইরা এগিয়ে আসছেন। কৃষক ভাইদের সুবিধার্থে আমার কিছু পরামর্শ যেমন, হালকা বেলে-দোআঁশ মাটি আলু চাষের জন্য উপযুক্ত। ভালো জাত ও বীজ আলু চাষের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আলু চাষ করার উপযুক্ত সময় এখনই। আলুর এক বিঘা জমিতে অর্থাৎ ৩৩ শতক জমিতে কখন কী পরিমাণ সার প্রয়োগ করলে ফলন বেশি পাওয়া যায়? আলুর জমিতে কখন কী সার কতটুকু প্রয়োগ করা দরকার, উচ্চ ফলন পেতে হলে কী করণীয়; সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা আজকের লেখার মূল বিষয়বস্তু।
আলুর ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই সঠিক সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ না করলে ভালো ফলন পাবেন না। এ ছাড়া সময়মতো সেচ দেওয়া বেশি ফলন পাওয়ার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আলুর জমিতে সাধারণত দুই থেকে তিন ধাপে সার প্রয়োগ করা হয়।
প্রথম ধাপ: আলু রোপণের আগে, জমি চাষের সময় মাটির সাথে সারগুলো মেশাতে হয়। তারপর আলু রোপণ করতে হয়।
দ্বিতীয় ধাপ: আলু রোপণের ২৪ থেকে ২৫ দিনের সময় অর্থাৎ আলুর গাছ যখন মাটি দিয়ে পুনরায় বেঁধে (কেইল) দেওয়া হয়, তখন দেওয়া হয়।
এ দুটি ধাপে কখন কী পরিমাণ সার দেওয়া প্রয়োজন, তা নিম্নরূপ:
যেসব কৃষক বাণিজ্যিকভাবে ডায়মন্ড এবং কার্ডিনাল জাতের আলু চাষ করে থাকেন, তাদের জন্য আলু রোপণের আগে, চাষের সময় মাটির সাথে যে পরিমাণ সার মেশাতে হবে; তা তুলে ধরা হলো। আলু চাষে প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমির জন্য ইউরিয়া ২৫ কেজি, পটাশ ৭৫ কেজি, টিএসপি ৭৫ কেজি, জিপসাম ৩০ কেজি, দস্তা ১ কেজি এবং বোরন ১ কেজি, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ৮ থেকে ১০ কেজি। এ ছাড়া মাটির পোকামাকড় এবং রোগজীবাণু ধ্বংসের জন্য তরল কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। এসব সার একত্রে মিশিয়ে জমিতে ছিটাতে পারেন।
আলু রোপণের পর সাধারণত মাটির জোর অনুযায়ী দুটি সেচের পর আলু গাছ মাটি দিয়ে বেঁধে দিতে হয়। অর্থাৎ আলু রোপণের ২৪ থেকে ২৫ দিনের ভেতর আলু গাছের দুপাশের মাটি কেটে, আগাছা পরিষ্কার করে, আলুর জমিতে দ্বিতীয় পর্যায়ের যে পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে, তা হলো: আলু চাষে প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমির জন্য ইউরিয়া ২৫ কেজি, পটাশ ২৫ কেজি, টিএসপি ২৫ কেজি, থিউভিট ১ কেজি, বোরন ১ কেজি এবং দস্তা ১ কেজি। এর সাথে তরল কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
এসব সার একত্রে মিশিয়ে জমিতে ছিটাতে পারেন। সার ছিটানোর পর দুপাশের মাটি দিয়ে আলু গাছকে বেঁধে (কেইল) দিতে হবে। আলু গাছকে মাটি দিয়ে বেঁধে দেওয়ার কাজটি নির্দিষ্ট মাপের কোদাল দিয়ে করা হয়। এ সময় একটি বিষয় খুব সতর্কতার সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে, আলু গাছকে মাটি দিয়ে বেঁধে দেওয়া শেষ হলে, আলু ক্ষেতে দ্রুত সেচ দিতে হবে। চাষিদের মনে রাখতে হবে, আলুর ভালো ফলন পেতে হলে সময়মতো সেচ দেওয়া খুবই